emotions...

emotions...
...life's only treasures

Wednesday, March 8, 2017

ওরে পলাশ

"ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে -
ডালে ডালে ফুলে ফলে পাতায় পাতায় রে,
আড়ালে আড়ালে কোণে কোণে ।।"
শহরে বড় হওয়া। পলাশ ফুল সেভাবে চিনি নি কোনওদিন। সরস্বতী পুজোর সময়েও সে ফুল এই শহরে বেশ দুর্মূল্য, ফুল বিক্রেতা দের কাছে। তাই তালিকা থেকে বাদ পড়ত প্রতি বছরই। চেনা হয়নি, রবিঠাকুরের পলাশ, চেনা হয়নি বসন্ত উৎসবের পলাশ, চেনা হয়নি শান্তিনিকেতনের পলাশ। কোনওদিন কেউ চিনিয়ে দেয়নি, ওইটা পলাশ গাছ, ঐটা পলাশ ফুল।
ফেসবুকের দৌলতে পলাশ ফুল চেনা। বন্ধুদের অ্যালবাম -এ, সকলের টাইমলাইনে। তারপর আরো ভালো করে চেনা গুগ্‌ল করে। বাঙালির মেয়ে বাঙলায় বসে পলাশ চিনছে ইন্টারনেটে! হায় রে!
তা সে যাই হোক, ৩৭ বছর বয়সে প্রথম কোন্‌টা পলাশ জেনে, পলাশ দেখা পলাশ চেনা। আর দেখা মাত্রই এক অজানা আকর্ষণে প্রেমে পড়ে যাওয়া। সেটা প্রেমের পড়ার সময় নয় মোটেই। বাবা তখন গুরুতর অবস্থায় অ্যাপোলো তে ভর্তি। অসুখ ভালো হওয়া দূরের কথা, অবস্থা একেকদিন একেকরকম। মে মাসের প্রচন্ড গরম। প্রচন্ড চিন্তা। অ্যাপোলোর ক্রমে আকাশচুম্বী বিল। সর্বত্র শুধু অন্ধকার। সেই সময় কসবা থেকে বাইপাস ধরে অ্যাপোলো যাওয়ার পথে হঠাত একদিন খেয়াল করলাম, পলাশ গাছ না!! পলাশ ফুল না!! একটু পরে আরেকটা গাছ। তারও একটু পরে আরেকটা গাছ। আগুনে পলাশ! ক্রমে গাছগুলো কোথায় তা মুখস্থ হয়ে গেল। ২০ দিন ধরে যাওয়া আসা, মুখস্থ তো হবেই। একেকদিন বেখেয়ালে গাছ গুলো পিছনে চলে যেত। মনখারাপ হয়ে যেত। আপোলোর সাথে কোনওদিন কোনও ভালো স্মৃতি হতে পারে না । স্মৃতি শুধু রয়ে যাবে সেই পলাশ দেখার নেশার স্মৃতি।
মাঝের দুটো বছর আর সেভাবে লক্ষ্য করা হয়নি। মনে বসন্ত না থাকলে যা হয় আর কী! লক্ষ্য করলাম কয়েক সপ্তাহ আগে গোলপার্কে। বিশাল গাছ। ফুলে ভর্তি। তলায় পড়েও আছে প্রচুর, কিন্তু লোকে এমন পদপিষ্ট করেছে যে তোলা যাবে না। অনেকক্ষণ দেখে চলে এলাম। ৪০-এ প্রথাম পলাশ গাছ আর ফুল কাছ থেকে দেখা! গত বুধবার কসবা থেকে চালতাবাগান যাওয়ার পথে লক্ষ্য না করে আর উপায় থাকলো না। আমার এই ইঁট কাঠ কংক্রিটের জঙ্গলে যে এমন ভাবে ঝেঁপে বসন্ত আসে তা আগে জানতাম না। দক্ষিণ থেকেই শুরু। গাছের সঙ্খ্যা বেড়ে গেল যত মধ্য কলকাতার দিকে এগোতে থাকলাম। ফাগুন লেগেছে, না আগুন লেগেছে?? আমার শহরে এত পলাশ গাছ আছে নাকি?? এত পলাশ ফোটে আমার শহরে? আমার শহরে এমন বসন্ত আসে? মন বিহ্বল । একই সঙ্গে মন খারাপ ও। গাছগুলো বড্ড উঁচু। বড্ড দূরের যেন। দূর থেকেই কি দেখতে হবে এই ফুল। হাতে নেওয়া যাবে না? এই ফুল কি আপন হয় না??
আজও মিন্টো পার্ক চলেছি, ডাক্তার দেখাতে। মা-কে দেখাচ্ছি, ঐ দেখো পলাশ গাছ! মা-ও দেখাচ্ছে আমাকে, ঐ দেখ্‌ আরেকটা। ১০-টা কুড়ি তে নাম লেখানোর পর জানা গেল, ডাক্তার দেখতে শুরু করবেন ১২-৩০-র পর।। আর আমাকে ডাকা হবে ১৬ নম্বরে। আমি আর মা আমাদের বহু পরিচিত ভগত সিং উদ্যানে চলে গেলাম। লেবু চা খেয়ে, অনেকটা হেঁটে, বেঞ্চে বসে, কাঠবিড়ালী দেখে, দোলনায় চড়ে, আবার হেঁটে দেখি উদ্যানের গেটের পাশেই, ভিতরেই একটা পলাশ গাছ! ফুলে ফুলে গরবিনী। আর নীচে পরিষ্কার ঘাসের উপর পড়ে আছে অজস্র পলাশ যার মধ্যে অধিকাংশই সদ্য ঝরে পড়া। আমাকে আর পায় কে! ৪০টা বসন্ত পার করে প্রথম পলাশ কুড়োনো, প্রথম পলাশ ছোঁয়া! হ্যাঁ অধরা ভালোবাসা কে প্রথম ছুঁলে এরকম শিহরণ হয় বৈ কী! যত গুলো পারলাম, মন প্রাণ ভরে পলাশ কুড়িয়ে নিলাম দ্রুত। কোথায় রাখব ঠিক নেই! পরে খাওয়ার জায়গায় সে ব্যবস্থাও হয়ে গেল। সাদা প্লাস্টিকের ব্যাগ ভর্তি পলাশ নিয়ে বাড়ি ঢুকে আর আমাকে পায় কে! কোথায় প্রেসক্রিপশান, কোথায় ফোন। ফুলগুলি জলে রেখে তারপর শান্তি। আমার সেই অধরা প্রেম আমার বাড়িতে ফাগুনের আগুন লাগিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কোথায় অবসাদ? কোথায় নিদ্রাহীনতা? কোথায় ক্লান্তি? "আজ জীবন খুঁজে পা-বি, ছুটে ছুটে আয়, মরণ ভুলে গিয়ে ছুটে ছুটে আয় ... আজ ফাগুন ফুলের আনন্দে সব ছুটে ছুটে আয় |" 

March 6, 2017

No comments: